ফিলিস্তিনের ইতিহাস

ফিলিস্তিনের ইতিহাস


 ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যের একটি ভূখণ্ড, যা ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর মাঝে অবস্থিত। এটি ইহুদি ধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের জন্মস্থান। ফিলিস্তিনের ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল, এবং এটি বিভিন্ন সংস্কৃতি ও জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা শাশিত হয়েছে।

প্রাচীন ইতিহাস

ফিলিস্তিনের প্রাচীন ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব ৩য় সহস্রাব্দে শুরু হয়, যখন কেনানীয়রা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব ১২শ শতাব্দীতে, ইহুদিরা মিশর থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনে আসেন এবং তারা এই অঞ্চলে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এই রাজ্যটি খ্রিস্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীতে ধ্বংস হয়ে যায়, এবং এরপর ফিলিস্তিন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা শাসিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে মিশর, ব্যাবিলন, পারস্য, গ্রীস, রোম এবং আরবরা।

প্রাচীন ফিলিস্তিন




কেনানীয়দের অবদান 


কেনানীয়রা: প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতি

কেনানীয়রা ছিল একটি প্রাচীন সেমিটিকভাষী জাতিগোষ্ঠী যারা খ্রিস্টপূর্ব ৩য় সহস্রাব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দের শেষের দিকে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে বসবাস করত। এই অঞ্চলটি আজ ইস্রায়েল, পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, লেবানন, সিরিয়া, এবং জর্ডানের অংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল।কেনানীয়রা একটি উন্নত সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে, যা শিল্প, বাণিজ্য, এবং ধর্মে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

প্রাচীন ইতিহাস

কেনানীয়দের কথা প্রথম জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩য় সহস্রাব্দের মিশরীয় লিপিতে । এই লিপিগুলিতে, কেনানীয়দের কে প্রায়শই "শত্রু" বা "বর্বর" হিসাবে বর্ণনা করা হয়।

খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে, কেনানীয়রা একটি উন্নত সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে। এই সভ্যতাটি শহর-রাজ্যের উপর ভিত্তি করে ছিল, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল তিরা, সিডন এবং আশুর। কেনানীয়রা সমৃদ্ধ শিল্প ও বাণিজ্য ছিল। তারা দক্ষ কারিগর, ব্যবসায়ী এবং নাবিক ছিলেন।

ইহুদিদের সাথে সংঘাত

খ্রিস্টপূর্ব ১২শ শতাব্দীতে, ইহুদিরা মিশর থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনে আসে। এই ঘটনাটিকে বাইবেলে "যাত্রা" বলা হয়। ইহুদিরা কেনানীয়দের সাথে জমি নিয়ে লড়াই করে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের পরাজিত করে।

ইহুদিরা কেনানীয়দের সংস্কৃতি ও ধর্মকে প্রভাবিত করে। ইহুদিরা কেনানীয়দের দেবতাদের কিছু গ্রহণ করে এবং তাদের নিজের দেবতাদের সাথে মিশ্রিত করে।

পতন

খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দের শেষের দিকে, কেনানীয় সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়। এই ধ্বংসের কারণগুলি অজানা, তবে এটি সম্ভবত মিশর, ব্যাবিলন এবং পারস্যের মতো শক্তিশালী সাম্রাজ্যের আক্রমণের কারণে হয়েছিল।

কেনানীয়দের অবদান

কেনানীয়রা প্রাচীন বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতি। তারা শিল্প, বাণিজ্য, এবং ধর্মে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। কেনানীয়দের অবদানগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • আলফাবেটঃ কেনানীয়রা আলফাবেটের উদ্ভাবক
  • শিল্পঃ কেনানীয়রা দক্ষ কারিগর ছিল। তারা মূর্তি, গহনা, এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম তৈরি করত।
  • বাণিজ্যঃ কেনানীয়রা একটি উন্নত বাণিজ্য নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে পণ্য বিক্রি করত।
  • ধর্মঃ মূলত কেনানীয়রা বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি পূজা করত। পরবর্তিতে তাদের ধর্মের উপরে ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল।
সহজকথায় এই কেনানীয়রাই ছিল ফিলিস্তিনের আদিবাসী গোষ্টি পরবর্তীতে এদেরই বড় একটি অংশ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে।

কেনানীয়দের উত্তরাধিকারিরা আজও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিচরন করছে। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং ধর্ম এই অঞ্চলের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল এক সময়।

মধ্যযুগীয় ইতিহাস

ক্রুসেডে ফিলিস্তিনিদের ভূমিকা: একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ

পবিত্রভূমি জেরুজালেমের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে ইউরোপের খ্রিস্টান ও প্রাচ্যের মুসলমানদের মধ্যে একাদশ থেকে এয়োদশ শতক পর্যন্ত ২০০ বছরব্যাপী যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তা ইতিহাসে ক্রুসেড নামে পরিচিত। ক্রুসেড শব্দটি দ্বারা মূলত ধর্মীয় যুদ্ধ বোঝানো হয়।

খ্রিস্টীয় যুগে, ফিলিস্তিন ক্রসেড সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।ক্রুসেড ছিল খ্রিস্টানদের দ্বারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি ধারাবাহিক সামরিক অভিযান। এই অভিযানগুলি খ্রিস্টীয় পবিত্র ভূমি, যা আজ ইস্রায়েল, পশ্চিম তীর, এবং জর্ডানের অংশ জুড়ে বিস্তৃত, ছিল খ্রিস্টানরা পবিত্র ভূমি পুনরুদ্ধার করার জন্য এই অঞ্চলে আক্রমণ পরিচালনা করেছিল।

ঐ সময় ফিলিস্তিনিরা মুসলমানদের পক্ষে লড়াই করেছিল এবং ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। ফিলিস্তিনিরা ক্রুসেডারদের দ্বারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছিল। তাদের সম্পত্তি লুট করা হয়েছিল এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছিল।ক্রুসেড মুসলিম ও খ্রিস্টানদের মধ্যে বিরোধকে আরও বৃদ্ধি করে।ইসরাইলে কোন আক্রমন হলে এই জন্যি আমরা দেখি ইসরাইলকে সহায়তা প্রদান করবার জন্য ইউরোপ ও আমেরিকা তাদের সমরাস্ত্র প্রদান ও সহযোগীতা করে এখনও।এই বিরোধ আজও অব্যাহত রয়েছে।তবে ক্রুসেড ফিলিস্তিনিদের জাতীয়তাবোধ বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে এখন পর্যন্ত। এই জাতীয়তাবোধ আজও ফিলিস্তিনি সংগ্রামের মূল চালিকা শক্তি।ক্রুসেড শেষ হওয়ার পরে, ফিলিস্তিন আবার আরবদের দ্বারা শাসিত হয়।

আধুনিক ইতিহাস

১৯ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে, ইহুদিরা ফিলিস্তিনে ফিরে আসতে শুরু করে। বিশেষ করে ২য় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার কর্তৃক ব্যপকভাবে ইহুদি নিধনের পর থেকে ইহুদিরা ফিলিস্তিনের অঞ্চলে এসে বসতি গড়তে শুরু করে, তবে এই অভিবাসন প্রক্রিয়াটি ব্যাপকভাবে আরবরা বিরোধিতা করেছিল। 1947 সালে, জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দুই রাষ্ট্রে বিভক্ত করার প্রস্তাব করে, একটি ইহুদি রাষ্ট্র এবং একটি আরব রাষ্ট্র। এই প্রস্তাবটি আরবরা প্রত্যাখ্যান করে, এবং এরপর আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধের ফলে ফিলিস্তিন বিভক্ত হয়ে যায়, একটি অংশ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং অন্য অংশটি পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকার একটি ফিলিস্তিনি অঞ্চলে পরিণত হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি


ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতি জটিল ও উত্তেজনাপূর্ণ। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ রয়েছে, যা নিয়মিত সহিংসতায় পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে, কিন্তু ইসরায়েল এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা

ফিলিস্তিনের ইতিহাস একটি দীর্ঘ ও জটিল ইতিহাস যা সংঘাত, সহিংসতা এবং শান্তির মিশ্রণ দ্বারা চিহ্নিত। এই ইতিহাস আজও ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে বিরোধের মূল কারণ।




ফিলিস্তিনের ইতিহাস সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে নিজের লিংকগুলো ফলো করতে পারেনঃ-

https://www.jugantor.com/islam-life/726948/মুসলমানদের-কাছে-ফিলিস্তিন-কেন-এত-গুরুত্বপূর্ণ

https://www.bbc.com/bengali/news-62779470

Post a Comment

Previous Post Next Post