The Book of Deadly Names

 The Book of Deadly Names নামে যে বইটির কথা অনেকেই উল্লেখ করেন, তা মূলত ইসলামী এবং জাদুবিদ্যার জগতের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত। এটি বিশেষ করে জ্বিন, কালো জাদু এবং তাদের নাম সম্পর্কিত তথ্যের জন্য বিখ্যাত।The Book of Deadly Names নিয়ে আরো বিশদ আলোচনা করতে গেলে এর উৎস, বিষয়বস্তু এবং এর চারপাশে ঘিরে থাকা রহস্য ও বিতর্ক গভীরভাবে বোঝা দরকার। এই বইটি মূলত জ্বিন, কালো জাদু, এবং রহস্যময় জ্ঞান নিয়ে আগ্রহী মানুষের জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে


বইটির উৎস ও ইতিহাস

  1. সলোমন (সোলায়মান নবী) এবং তার সংযোগ:

    • The Book of Deadly Names ধারণাটি "The Lesser Key of Solomon" নামক একটি পশ্চিমা রহস্যবাদী গ্রন্থ থেকে প্রভাবিত হতে পারে।
    • সোলায়মান (Solomon) নবীর কাছে জ্বিনদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিল বলে ইসলামী বিশ্বাসে উল্লেখ রয়েছে। এই ক্ষমতা তার কাছে এক বিশেষ আংটি বা "Seal of Solomon"-এর মাধ্যমে এসেছিল।
    • ধারণা করা হয়, সোলায়মান নবী জ্বিনদের নাম এবং তাদের কাজ উল্লেখ করে একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। সেই তথ্য কোনোভাবে পশ্চিমা রহস্যবাদীদের কাছে পৌছেছে এবং তারা তা "The Book of Deadly Names" নামে পরিচিত করেছে।
  2. প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রহস্যবাদী গ্রন্থগুলোর সঙ্গে সংযোগ:

    • মধ্যযুগীয় ইউরোপে "Grimoires" (যাদুর বই) নামে পরিচিত অনেক গ্রন্থ রচিত হয়েছিল, যেখানে ডিমন বা জ্বিনদের নাম, ক্ষমতা, এবং ডাকার পদ্ধতি উল্লেখ ছিল।
    • এই বইটি হয়তো সেই Grimoires-এর সাথে মিশে গিয়ে একটি কাল্পনিক বা অতিরঞ্জিত বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে।

বইয়ের বিষয়বস্তু

The Book of Deadly Names নিয়ে যেসব দাবি রয়েছে, তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হলো:

  1. ৭২ জ্বিনের নাম ও তাদের ক্ষমতা:

    • বইটিতে ৭২টি ভয়ঙ্কর জ্বিন বা ডিমনের নাম উল্লেখ রয়েছে বলে দাবি করা হয়।
    • প্রতিটি নামের সঙ্গে তাদের বিশেষ ক্ষমতা, মানুষের উপর প্রভাব এবং তাদের দ্বারা কীভাবে কাজ করানো যায়, তা উল্লেখ থাকতে পারে।
  2. জাদুবিদ্যা বা ডাক পদ্ধতি:

    • বইটিতে বিভিন্ন মন্ত্র, ডাকপদ্ধতি, এবং রিচ্যুয়াল উল্লেখ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে জ্বিনদের ডেকে আনা বা তাদের দ্বারা কাজ করানো সম্ভব বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন।
    • এই রিচ্যুয়ালগুলো সাধারণত আরামিক, ল্যাটিন, হিব্রু বা আরবি ভাষায় লেখা থাকতে পারে।
  3. জ্বিনদের বিপদ ও সতর্কতা:

    • এই বইটি পড়া বা ব্যবহারের সময় অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। কারণ, এতে উল্লেখিত জ্ঞানের অপব্যবহার করলে তা ব্যবহারকারীর উপরেই কাল হয়ে ফিরতে পারে।
    • কিছু মানুষ বিশ্বাস করেন যে এই বইতে দেওয়া নাম বা মন্ত্র ব্যবহার করলে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ ডেকে আনতে পারে।
  4. জ্বিনদের শ্রেণিবিন্যাস:

    • বইটিতে জ্বিনদের বিভিন্ন ধরণের শ্রেণিবিন্যাস থাকতে পারে, যেমন:
      • শাসক জ্বিন: যারা অন্য জ্বিনদের নেতৃত্ব দেয়।
      • বিশেষজ্ঞ জ্বিন: যারা জাদুবিদ্যা, ধনসম্পদ, বা কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে।
      • বিপজ্জনক জ্বিন: যারা মানুষকে ক্ষতি করার জন্য পরিচিত।

ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ

ইসলামী দৃষ্টিকোণ:

  • ইসলামে জ্বিন এবং কালো জাদু নিয়ে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। পবিত্র কুরআনে জ্বিন সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে এবং কালো জাদু বা সিহর (Sihr) নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
  • ইসলামী স্কলাররা বলে থাকেন, জ্বিন নিয়ে গভীর গবেষণা বা তাদের নাম ডাকা মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ। কারণ, এটি শিরক (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা) হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

পশ্চিমা রহস্যবাদী ও কালো জাদুর দৃষ্টিকোণ:

  • পশ্চিমা বিশ্বাস ও রহস্যবাদে "The Book of Deadly Names" কখনো কখনো Demonology বা Occult Practices-এর অংশ হিসেবে ধরা হয়।
  • এই বইয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল কালো জাদুবিদ্যায় আগ্রহীদের জন্য এক ধরনের "গাইড" তৈরি করা।

বইটি নিয়ে বিতর্ক

  1. সত্যতা:

    • অনেকেই এই বইটিকে সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং মধ্যযুগীয় জাদুবিদ্যার রূপকথা বলে মনে করেন।
    • কিছু অংশ "The Lesser Key of Solomon" থেকে অনুপ্রাণিত বলে ধারণা করা হলেও, এতে উল্লেখিত তথ্যের ঐতিহাসিক বা বাস্তব ভিত্তি নেই।
  2. বিপদ এবং ভয়:

    • যারা এই বইটি নিয়ে কাজ করতে গেছেন, তারা অনেক সময় দাবি করেছেন যে এর প্রভাব খারাপ এবং ভয়ংকর। কিছু মানুষ বলেছেন, বইটির চর্চা তাদের মানসিক অশান্তি বা শারীরিক বিপদ ডেকে এনেছে।
  3. সতর্কতা:

    • ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, বিশেষত ইসলামিক পণ্ডিতরা এই ধরনের বই থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। কারণ, এটি আপনাকে ঈমান থেকে সরিয়ে দিতে পারে এবং জিনদের সঙ্গে অযথা সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা বিপজ্জনক হতে পারে।

সংক্ষেপে উপসংহার

  • The Book of Deadly Names একটি রহস্যময় এবং বিতর্কিত গ্রন্থ। এটি কালো জাদু, জ্বিন, এবং তাদের ডাকার পদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে প্রচলিত। তবে এর সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
  • ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি পড়া বা ব্যবহার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকারক হতে পারে।
  • আগ্রহ থাকলেও এটি পড়ার আগে এর ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক প্রভাব ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত।
পরের পোষ্টে The Laser Key of Solomon নিয়ে কথা বলব এবং সম্ভব হলে বইটি কে অনুবাদ করে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করব।


Post a Comment

Previous Post Next Post